ভিটামিন এ :
(ক) চোখ সুস্থ রাখে ও স্বল্প আলোতে দেখার ক্ষমতাকে রক্ষা করে ।
(খ) অস্থিকোষ ও দাঁতের গঠনকে প্রভাবিত করে।
(গ) সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে।
উৎস : সয়াবিন, চাল, ভুট্টা, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, পাকা আম, পাকা পেঁপে, পাকা কাঁঠাল, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ।
ভিটামিন ডি এর কাজ :
(ক) শরীরের অস্ত্র ও কিডনি হতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে।
(খ) শরীরের হাড় ও দাঁত সুগঠিত ও মজবুত করে ।
(গ) শিশুদের রিকেট ও বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া (Osteomalacia) রোগ প্রতিরোধ করে।
উৎস : ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন, যকৃৎ ও তৈলাক্ত মাছ। সাধারণত উদ্ভিজ্জ উৎসে ভিটামিন ডি নেই।
ভিটামিন ই এর কাজ :
(ক) কোষের ঝিল্লি গঠন করে।
(খ) ক্যারোটিন বিপাকে সহায়তা করে ।
(গ) গর্ভপাত প্রবণতা কমিয়ে দেয় ।
উৎস: উদ্ভিজ্জ তেল (বাদাম, ভুট্টা, সূর্যমুখী, সয়াবিন, পাম, নারিকেল) ভিটামিন ই এর উৎকৃষ্ট উৎস। দুধ, মাখন ডিমে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
ভিটামিন কে এর কাজ :
(ক) রক্ত জমাটকরণ কাজে সহায়তা করে।
উৎস : লেটুস, বাধাকঁপি, ফুলকপি, গাজর, মটরশুঁটি, ডাল, দুধ, ডিম, মাছ মাংস ইত্যাদি ।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স: ভিটামিন বি একটি একক ভিটামিন নয়। প্রায় ৮ প্রকার বি ভিটামিনকে একত্রে বি- কমপ্লেক্স বলা হয়। এগুলোর প্রত্যেকটির আলাদা গুণ ও কাজ আছে। এগুলো হলো- (১) ভিটামিন বি১ (২) ভিটামিন বি২ (৩) নায়াসিন (বি৫) (8) পিরিডক্সিন (বি৬) (৫) পেন্টোথেনিক এসিড (৬) বায়োটিন (৭) ফলিক এসিড ও (৮) ভিটামিন বি১২ ।
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) এর কাজ :
(১) বেরিবেরি রোগ প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
(২) শর্করা জাতীয় খাদ্য বিপাকে সহায়তা করে ।
(৩) পরিপাকতন্ত্রের সুস্থতা রক্ষা করে।
উৎস: ঢেঁকিছাঁটা চাল, বাদাম, গম, মটরশুঁটি, মাছ, ডিম, যকৃৎ ইত্যাদি।
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লেভিন) এর কাজ :
(১) কোষকলার শ্বসন ও বিপাক কাজে সহায়তা করে ।
(২) ত্বকের সৌন্দর্য ও সজীবতা রক্ষা করে।
(৩) চোখ ও স্নায়ুর সুস্থতা রক্ষা করে।
উৎস: ঢেঁকিছাঁটা সিদ্ধচাল, ডাল, ভুট্টা, বাদাম, অঙ্কুরিত শস্য দানা, মটরশুঁটি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি ।
নায়াসিন বা নিকোটেনিক এসিড :
(১) নায়াসিন শর্করা, আমিষ ও স্নেহ থেকে শক্তি উৎপাদন শ্বসন কাজে সহায়তা করে ।
(২) সুস্থ ত্বক, অস্ত্র ও স্নায়ুর জন্য নায়াসিন প্রয়োজন ।
উৎস: ডাল, বাদাম, ভুট্টা, তেলবীজ, ছোলা, মাছ, মাংস ও যকৃৎ ইত্যাদি।
পিরিডক্সিনের কাজ :
(১) আমিষ বিপাকে এনজাইমের সহায়তা করে ।
(২) বাড়ন্ত শিশুর বর্ধনে সহায়তা করে।
উৎস: ঈস্ট, চালের কুঁড়া, গম, ছোলা, বাদাম, সবুজ শাক, মাছ, মাংস, ও যকৃৎ ইত্যাদি।
ফলিক এসিড :
(১) কোষ বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
(২) রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে ।
উৎস: বাদাম, ছোলা, ডাল, চাল, আটা, সবুজ শাকসবজি, কলিজা, বৃক্ক, মাছ ও মাংস ইত্যাদি।
ভিটামিন বি১২:
(১) রক্তের লোহিত কণিকা গঠন করে।
(২) স্বাস্থ্যের উন্নতি ও ক্ষুধা বৃদ্ধিতে প্রভাবিত করে ।
উৎস: একমাত্র উৎস প্রাণিজ খাদ্য যেমন- যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।
ভিটামিন সি :
(১) এটি কোলাজেন নামক আমিষ তৈরি করে হাড়, তরুণাস্থি ও ত্বকের রক্ষণাবেক্ষণ করে।
(২) রক্তের বিশুদ্ধতা ও রক্ত গঠনে সহায়তা করে।
(৩) ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি শুকাতে সাহায্য করে।
(৪) এটি জারন প্রতিরোধক বা এন্টি অক্সিডেন্ট (Anti oxidant) হিসেবে কাজ করে ।
উৎস: সব রকম টাটকা ফল ও সবজি, আমলকী, পেয়ারা, কুল, কামরাঙ্গা, আমড়া, আনারস, জাম্বুরা, লেবু কাঁচামরিচ ইত্যাদি। টিনজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ভিটামিন সি থাকে না ।
৬. পানি : আম, কাঁঠাল, ডাব, তরমুজ, পেঁপে, আনারস, জাম্বুরা, আঁখ বিভিন্ন প্রকার ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। মানব দেহের প্রায় ৬৩% পানি। শরীরে পানির ঘাটতি হলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
পানির কাজ :
(১) পানি পরিপাক ও পরিশোষণে সাহায্য করে।
(২) বিপাক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন দূষিত পদার্থ নিষ্কাশণ করে।
(৩) দেহ থেকে ঘাম নিরসন ও বাষ্পীভবনের দ্বারা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।
উৎস : খাবার পানি. চা, দুধ, কফি, সবজি ও ফল থেকে প্রাপ্ত পানি।
সুষম খাদ্য : আমাদের পেট খালি থাকলে ক্ষুধা অনুভব করি এবং তখন খাওয়ার প্রয়োজন হয়। ক্ষুধা লাগলে পেট ভরে খেয়ে ক্ষুধা দূর করাই উদ্দেশ্য নয়, খাওয়ার উদ্দেশ্য হলো শরীর রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো পরিমিত পরিমাণে শরীরে সরবরাহ নিশ্চিত করা। পুষ্টি উপদানগুলো হলো আমিষ, শর্করা, স্নেহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও পানি।
দেহে যে ছয়টি পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন তা তিন শ্রেণীর বিভিন্ন প্রকার খাদ্য থেকে পাওয়া যায়। একজন লোকের দেহের স্বাভাবিক পুষ্টির জন্য বিভিন্ন উপাদান বহুল যেসব খাদ্যসামগ্রী পরিমাণমতো প্রয়োজন হয় তাকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্য দেহে শক্তি জোগানো ছাড়াও দেহের বৃদ্ধি সাধন, ক্ষয়পূরণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দান করে। সুতরাং মাছ-ডাল, ভাত-রুটি, শাকসবজি, ফল এসব বিভিন্ন শ্রেণীর খাদ্য নিয়েই খাবার সুষম হয়। যেসব শর্ত পালনের ফলে খাবার সুষম হয় তা নিম্নরূপ-
(১) প্রতি বেলায় খাবারে তিন শ্রেণীর খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করে খাদ্যের ছয়টি উপাদানের অন্তর্ভুক্ত নিশ্চিতকরণ।
(২) প্রত্যেক শ্রেণীর খাদ্য নির্ধারিত পরিমাণে (পেশা অনুযায়ী) পরিবেশন করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহে নিশ্চিতকরণ।
(৩) খাদ্য প্রস্তুতে সতর্কতা অবলম্বন করে খাদ্য উপাদানের অপচয় রোধ।
(৪) দৈনিক মোট ক্যালরির ৬০-৭০% শর্করা জাতীয় খাদ্য, ৩০-৪০% স্নেহ জাতীয় খাদ্য এবং ১০% আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকে গ্রহণ।
(৫) দৈনিক মাথাপিছু কমপক্ষে ৩০ গ্রাম তেল রান্নায় ব্যবহার এবং ২০ গ্রাম গুড়/চিনি পরিবেশন।
(৬) খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশনে যথাযথভাবে পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন ।
(৭) এছাড়া প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
সুষম খাদ্যকে উপাদেয় করার জন্য খাদ্য প্রস্তুতে মশলা ব্যবহার করা যেতে পারে। মশলা শুধু খাবার উপাদেয় করে না বরং কিছু খাদ্য উপাদান যোগ করে। সুষম খাদ্যে কিছু পরিমাণে আঁশ থাকা প্রয়োজন । কারণ আঁশ খাদ্যনালীতে হজমকৃত খাদ্য চলাচল ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। সবধরনের শাকসবজি ও ফলমূলে যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ থাকে। তাই খাদ্য সুষম করার জন্য প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণ ফল ও সবজি থাকা প্রয়োজন।
আর্থিক অবস্থা ও খাদ্য প্রাপ্তি সহজলভ্যতার ওপর নির্ভর করে সুষম খাদ্য তৈরি করা যাবে। সুষম খাদ্য হিসেবে যে কোনো একশ্রেণির খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে দামি বা সস্তা খাবার গ্রহণ করা হলে খাদ্যের সুষমতা নষ্ট হবে না। এছাড়া এ তালিকায় ভিটামিন-সি যুক্ত করতে হবে। কারণ ভিটামিন-সি শরীরে জমা হয় না, প্রতিদিন তা খেতে হয়। ফল ও সবজিতে ভিটামিন-সি আছে। কিন্তু সবজি রান্নার ফলে ভিটামিন-সি তাপে নষ্ট হয়। নিম্নের চার্টে তিন ধরনের খাদ্যের দামি ও সস্তা খাবারের তালিকা দেওয়া হলো ।
সারণি : কাজের ভাগ হিসেবে তিন শ্রেণির দামি ও সস্তা খাবার :
খাদ্যের শ্রেণি | দামি খাবার | সস্তা খাবার |
শক্তিবর্ধক খাদ্য | চিকন চালের ভাত, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, চিনি, ঘি, মাখন, মধু | মোটা চালের ভাত, আটার রুটি, মিষ্টি আলু, চিনা, কাউন, ভুট্টা, কচু, কাচকলা, মূলা, গুড়, তেল |
দেহ বর্ধক খাদ্য | বড় মাছ, মাংস, ডিম, দুধ | ছোট গুঁড়ামাছ, ডাল, শিমের বিচি, বাদাম, সয়াবিন । |
রোগ প্রতিরোধক খাদ্য | দুধ, কলিজা, কলা, কমলা, আপেল আঙ্গুর, ডালিম, বেদানা, পাকা আম, | পাকা পেঁপে ইত্যাদি। | সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, সাজনা, মিষ্টি কুমড়া, আমলকী, লেবু, জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, আম ইত্যাদি । |
উপরের সারণি থেকে ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যের সমন্বয় করে সুষম খাদ্য তৈরি করতে হয়। তবে, মনে রাখতে হবে খাদ্য তালিকায় যত বেশি বিভিন্ন খাদ্যবস্তুর সমন্বয় করা যাবে, তত বেশি সুষম হবে। একজন লোক কোন শ্রেণির খাদ্য কি পরিমাণে খেলে তা সুষম হবে তা নির্ভর করে তার বয়স, পেশা, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার ওপর। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি সস্তা সুষম খাদ্যের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো-
১. চাল বা গম + ডাল + শাক (পুঁইশাক /পালংশাক / ডাঁটা) বা সবজি (টমেটো, শিম, বরবটি, ফুলকপি, লাউ, করলা ইত্যাদি)।
২. চাল বা গম + ডাল + সামান্য মাছ + শাকসবজি।
৩. মায়ের দুধ (শিশুর জন্য সুষম খাদ্য)
৪. চাল বা গম + মাংস + শাকসবজি
৫. চাল বা গম + গরুর দুধ।
ছোট বাচ্চাদের শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পায়, সে জন্য বয়স্কদের তুলনায় তাদের আমিষ জাতীয় খাদ্য বেশি প্রয়োজন হয়। যারা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে (কাঠ কাটা, মাটিকাটা, রিক্সা বা ঠেলাগাড়ি টানা ইত্যাদি) তাদের দরকার বেশি বেশি শক্তিদায়ক খাদ্য, যেমন- শর্করা। গর্ভবতী ও প্রসূতিকালে নারীদের জন্য স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি পরিমাণে এবং বৈচিত্র্যময় খাবার প্রয়োজন হয়।
আরও দেখুন...